ইউরিন ইনফেকশন হলে কি সমস্যা হয়? সমস্যার প্রতিরোধ উপায়
ইউরিন ইনফেকশন হলে কি সমস্যা হয়? জানুন এর লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত। সুস্থ থাকতে অনুসরণ করুন সঠিক অভ্যাস।

ইউরিন ইনফেকশন - Urinary tract infections (UTIs) বা প্রস্রাবের সংক্রমণ একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়। তবে নারীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এই সংক্রমণ মূত্রতন্ত্রের যেকোনো অংশে হতে পারে, যেমন কিডনি, মূত্রনালি, মূত্রথলি বা মূত্রনালির শেষ অংশে।
ইউরিন ইনফেকশন হলে কি সমস্যা হয়?
ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রস্রাবের সময় জ্বালা, ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ এবং পেটের নিচে ব্যথা হতে পারে। অবহেলা করলে কিডনি পর্যন্ত সংক্রমণ ছড়াতে পারে। নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ব্যথাঃ ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এটি সংক্রমণের একটি সাধারণ লক্ষণ।
- ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজনঃ সংক্রমণের কারণে মূত্রথলি অতিসংবেদনশীল হয়ে পড়ে, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসে।
- প্রস্রাবের রঙ ও গন্ধ পরিবর্তনঃ প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হয়ে যেতে পারে এবং দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে।
- তলপেটে ব্যথাঃ তলপেটে বা পিঠের নিচের দিকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়।
- জ্বর ও ক্লান্তিঃ সংক্রমণ গুরুতর হলে জ্বর, কাঁপুনি ও অতিরিক্ত ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ
ইউরিন ইনফেকশনের সাধারণ লক্ষণগুলো হলোঃ
ক্রমিক | লক্ষণ |
---|---|
১ | প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া |
২ | ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ |
৩ | প্রস্রাবে দুর্গন্ধ বা ঘোলা রঙ |
৪ | পেটের নিচে বা কোমরে ব্যথা |
৫ | জ্বর বা কাঁপুনি (কখনও কখনও) |
ইউরিন ইনফেকশনের কারণ
ইউরিন ইনফেকশনের কারণ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- অপরিষ্কারতাঃ গোপনাঙ্গ পরিষ্কার না রাখা, গোসল না করা বা প্রস্রাবের পর সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে সংক্রমণ হতে পারে।
- পানি কম পান করাঃ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি না পান করলে মূত্রতন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া জমে সংক্রমণ হতে পারে।
- আঁটোসাঁটো পোশাক পরাঃ টাইট অর্ন্তবাস বা পোশাক পরলে গোপনাঙ্গে ঘাম জমে, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- প্রস্রাব চেপে রাখাঃ দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চেপে রাখলে মূত্রথলিতে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়।
- শারীরিক সম্পর্কের পর পরিষ্কার না থাকাঃ শারীরিক সম্পর্কের পর গোপনাঙ্গ পরিষ্কার না করলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
ইউরিন ইনফেকশনের প্রতিকার ও প্রতিরোধ
নিচে ইউরিন ইনফেকশনের প্রতিকার ও প্রতিরোধ উল্লেখ করা হলোঃ
- পর্যাপ্ত পানি পানঃ প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন, যাতে মূত্রতন্ত্র পরিষ্কার থাকে।
- সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখাঃ প্রস্রাব বা মলত্যাগের পর গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করুন এবং শুকনো রাখুন।
- সঠিক পোশাক পরাঃ সুতির ও ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, যা গোপনাঙ্গে বায়ু চলাচল নিশ্চিত করে।
- প্রস্রাব চেপে না রাখাঃ প্রস্রাবের বেগ এলে তা চেপে না রেখে সময়মতো মূত্রত্যাগ করুন।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃ চিনি, ক্যাফেইন ও মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন। দই, জাম ও ক্র্যানবেরি জুস খেতে পারেন, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ইউরিন ইনফেকশন হলে কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
- লক্ষণগুলি ২-৩ দিনের মধ্যে না কমলে
- জ্বর, কাঁপুনি বা তীব্র ব্যথা থাকলে
- প্রস্রাবে রক্ত দেখা গেলে
- গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে
ইউরিন ইনফেকশনের প্রাকৃতিক প্রতিকার
- দইঃ প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই মূত্রতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
- জামঃ জামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- ক্র্যানবেরি জুসঃ ক্র্যানবেরি জুস ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে।
FAQ - সাধারণ জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
ইউরিন ইনফেকশন কি ছোঁয়াচে?
না, এটি সাধারণত ছোঁয়াচে নয়। তবে অপরিষ্কারতা ও কিছু অভ্যাসের কারণে এটি হতে পারে।
ইউরিন ইনফেকশন হলে কি অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন?
হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করেন। তবে স্বেচ্ছায় ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে কি করা উচিত?
পর্যাপ্ত পানি পান, গোপনাঙ্গ পরিষ্কার রাখা, সঠিক পোশাক পরা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা উচিত।
লেখক মন্তব্য
এই নিবন্ধটি ইউরিন ইনফেকশন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং পাঠকদের সঠিক তথ্য প্রদান করবে। ইউরিন ইনফেকশন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন।
আপনার মন্তব্যটি এখানে লিখুন
comment url