সূরা আল কাফিরুন – বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ । ফজিলত । PDF
আজকের ব্লগে সূরা আল কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ এবং সূরা কাফিরুন এর ফজিলত সহ আরও কিছু গুরুপ্তপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সূরা কাফিরুন একটি মক্কায় অবতীর্ণ সংক্ষিপ্ত সূরা, যেখানে ইসলাম ও কুফরের মধ্যকার স্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। PDF নিচে রয়েছে।
সূরা কাফিরুন এ মুসলমানদের বিশ্বাসে আপসহীন থাকার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এই সূরাটি একত্ববাদ ও ধর্মীয় স্বকীয়তা রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এটি প্রতিদিনের জীবনে শক্তি যোগায়।

সূরা কাফিরুন
বিষয় | তথ্য |
---|---|
সূরার নাম | সূরা আল-কাফিরুন |
সূরা কোথায় অবতীর্ণ | মক্কায় |
সূরার নামের অর্থ | হে কাফিরগণ |
কুরআনের কত নাম্বার সুরা | ১০৯ |
সূরার আয়াতের সংখ্যা | ৬ |
সূরায় কি রুকু আছে (থাকলে কয়টি) | আছে, ১টি |
কত নাম্বার পারার সূরা | ৩০ পারা |
সূরার শব্দ সংখ্যা | ২৯ |
সূরার বর্ণ সংখ্যা | ৯৮ |
সূরা আল কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ - সূরা কাফিরুন বাংলা অর্থসহ
আয়াত নাম্বার | আরবি | উচ্চারণ | বাংলা অনুবাদ |
---|---|---|---|
بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পরম করুণাময়, অতি দয়ালু আল্লাহর নামে |
|||
১ | قُلْ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلْكَـٰفِرُونَ | কুল্ ইয়া আইয়ুহাল্ কাফিরূন | বলুন, হে কাফিররা! |
২ | لَآ أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ | লা আ'বুদু মা তা'বুদূন | আমি ইবাদত করিনা সেই বস্তুর, যেগুলোর তোমরা ইবাদত করো। |
৩ | وَلَآ أَنتُمْ عَـٰبِدُونَ مَآ أَعْبُدُ | ওয়ালা আনতুম 'আবিদূনা মা আ'বুদ | আর তোমরাও ইবাদত করছ না সেই সত্তার, যার আমি ইবাদত করি। |
৪ | وَلَآ أَنَا۠ عَابِدٌۭ مَّا عَبَدتُّمْ | ওয়ালা আনা 'আবিদুম মা 'আবাত্তুুম | আর আমি ইবাদতকারী নই সেই বস্তুর, যেগুলোর তোমরা ইবাদত করেছ। |
৫ | وَلَآ أَنتُمْ عَـٰبِدُونَ مَآ أَعْبُدُ | ওয়ালা আনতুম 'আবিদূনা মা আ'বুদ | আর তোমরাও ইবাদতকারী নও সেই সত্তার, যার আমি ইবাদত করি। |
৬ | لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِىَ دِينِ | লাকুম দীনুকুম ওয়া লিয়াদীন | তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম, আর আমার জন্য আমার ধর্ম। |
সূরা কাফিরুন এর ব্যাখ্যা ও আলোচনা
সূরা কাফিরুন ইসলামের মৌলিক আকীদা তাওহিদ বা একত্ববাদকে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করে। মক্কার কাফিররা যখন প্রস্তাব দিল—তারা এক বছর আল্লাহর উপাসনা করবে, যদি মুসলমানরা এক বছর তাদের মূর্তির উপাসনা করে—তখন এই সূরা নাজিল হয়।
এটি ছিল ইসলামের স্পষ্ট বার্তাঃ বিশ্বাসে আপোষ নেই। সূরাটি জানিয়ে দেয়, “তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আমার ধর্ম আমার জন্য।” এটি কোনো ঘৃণা নয়, বরং বিশ্বাসের দৃঢ় অবস্থান।
সূরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ অনুযায়ী প্রতিটি আয়াতে তাওহিদের জোরালো ঘোষণা রয়েছে, যা মুমিনের আত্মসম্মান ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক।
সূরা কাফিরুন এর শিক্ষা
- বিশ্বাসে আপোষ নয়ঃ একজন মুসলমান নিজের আকীদা ও ধর্মীয় চেতনায় কখনও ছাড় দেয় না।
- সহনশীলতা বজায় রেখে সত্যের পথে থাকাঃ সূরার শেষে বলা হয়েছে, “তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আমার ধর্ম আমার জন্য”—এটি অন্য ধর্মের প্রতি অবমাননা নয়, বরং নিজ ধর্মে অটল থাকার ঘোষণা।
- চাপ বা প্রলোভনের মুখেও নীতিগত স্থিরতাঃ দুনিয়াবি সুবিধার জন্য সত্যের সঙ্গে আপোষ করা ইসলাম সমর্থন করে না।
এই শিক্ষা গুলো বাস্তব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সূরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ জানার পাশাপাশি এর মর্মবাণী উপলব্ধি করা জরুরি।
সূরা কাফিরুন এর ফজিলত কি
সূরা কাফিরুন এর ফজিলত নিয়ে একাধিক সহিহ হাদিস পাওয়া যায়। নিচে কিছু উল্লেখ করা হলোঃ
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তুমি যখন ঘুমাতে যাও, সূরা কাফিরুন পড়ে ঘুমাও। এটি শিরক থেকে মুক্তি দেয়।” — (আবু দাউদ)
এই সূরা পাঠ করলে অন্তর বিশুদ্ধ থাকে, ঈমান দৃঢ় হয় এবং শিরক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, এই সূরাটি তাওহিদের স্পষ্ট ঘোষণা—যা কুফরের সব পথ বন্ধ করে দেয়।
অনেক সাহাবি ফজরের ও ইশার পরের সুন্নাতে এই সূরা নিয়মিত পড়তেন। এটি প্রমাণ করে যে সূরা কাফিরুন এর ফজিলত কেবল তত্ত্বগত নয়, বরং নিয়মিত আমলের মধ্য দিয়েও প্রমাণিত। সূরা কাফিরুন বাংলা অর্থসহ পাঠ করলে আমরা বুঝতে পারি, এই সূরা শুধু মুখস্থ করার জন্য নয়—বরং চিন্তার জন্য।
সূরা কাফিরুন কবে এবং কোথায় অবতীর্ণ হয়?
সূরা কাফিরুন মক্কায় অবতীর্ণ হয়। সময়কাল ছিল ইসলামি দাওয়াতের শুরুর দিক, যখন কুরাইশরা ইসলামকে প্রতিযোগী ধর্ম হিসেবে দেখতে শুরু করে।
তারা প্রস্তাব দিয়েছিল—এক বছর তারা আল্লাহর ইবাদত করবে, আর এক বছর নবী (সা.) তাদের দেবতাদের উপাসনা করবেন। এই আপোষমূলক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতেই সূরা কাফিরুন অবতীর্ণ হয়।
এটি মুসলমানদের আত্মপরিচয় ও ধর্মীয় অবস্থানে দৃঢ় থাকার শিক্ষায় উদ্দীপ্ত করে। এই সূরার মাধ্যমে মুসলমানদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আপোষ নয়, বরং একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের ওপর অটল থাকতে হবে।
যখন কেউ সূরা কাফিরুন বাংলা অর্থসহ ও সূরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ জানে, তখন সে সূরাটির গভীর বার্তা বুঝে নিতে পারে সহজেই।
FAQ - সাধারন জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
সূরা কাফিরুন এর আয়াত সংখ্যা কত?
উত্তরঃ সূরা কাফিরুন এ মোট ৬টি আয়াত নিয়ে গঠিত।
সূরা কাফিরুন এর ফজিলত কি?
উত্তরঃ সূরা কাফিরুন তাওহিদের শক্তিশালী ঘোষণা। এটি পাঠ করলে শিরক থেকে নিরাপদ থাকা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) রাতে ঘুমানোর আগে এটি পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং বলেছেন—এটি শিরক থেকে মুক্তি দেয় (সুনানে আবু দাউদ)। এটি ঈমানের দৃঢ়তা ও বিশ্বাসে অটল থাকার শিক্ষা দেয়।
সূরা কাফিরুন কত পারায় আছে?
উত্তরঃ সূরা কাফিরুন কুরআনের ৩০ নম্বর পারায় অবস্থিত।
সূরা কাফিরুন কুরআনের কত নাম্বার সূরা?
উত্তরঃ এটি কুরআনের ১০৯ নম্বর সূরা।
সূরা কাফিরুন কবে অবতীর্ণ হয়?
উত্তরঃ সূরা কাফিরুন ইসলামের শুরুর দিকে, নবী মুহাম্মাদ (সা.) যখন মক্কায় ছিলেন—তখন অবতীর্ণ হয়। কুরাইশদের আপোষমূলক প্রস্তাবের জবাবে এটি নাজিল হয়।
সূরা কাফিরুন কোথায় অবতীর্ণ হয়?
উত্তরঃ এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। মক্কার কাফিরদের সঙ্গে তাওহিদের বিষয়ে স্পষ্ট সীমারেখা টানার জন্য এই সূরা নাজিল হয়।
লেখক মন্তব্য
সূরা আল-কাফিরুন হলো ঈমানের স্পষ্ট ঘোষণা। এটি আমাদের শেখায়, বিশ্বাসে আপোষ নয়—নিষ্ঠা ও সৎপথে অটল থাকা জরুরি। ইসলামের মৌলিক আকীদা তাওহিদকে সুন্দরভাবে তুলে ধরে এই সূরা। প্রতিদিনের জীবনে এর বার্তা গভীরভাবে প্রযোজ্য।
সূরা কাফিরুন একটি ছোট অথচ শক্তিশালী সূরা। এটি আমাদের শেখায়—বিশ্বাসে আপোষ করা যায় না। তাওহিদের এই ঘোষণা আজকের সমাজেও সমানভাবে প্রযোজ্য।
যারা সূরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ এবং সূরা কাফিরুন বাংলা অর্থসহ জানেন, তারা কুরআনের এই মর্মবাণী ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন।
সূরা কাফিরুন এর ফজিলত শুধু দুনিয়ায় নয়, আখিরাতেও উপকারে আসবে—যদি আমরা এই সূরার শিক্ষা বাস্তব জীবনে অনুসরণ করি। সূরা কাফিরুন এর PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
আপনার মন্তব্যটি এখানে লিখুন
comment url