সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসায়, কোন চাকরিতে কত বেতন ?
২০২৫ সালে সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত? কোন পেশায় কত টাকা পাওয়া যায়, তা বিস্তারিতভাবে জানুন এই নিবন্ধে।
অনেক বাংলাদেশি কর্মজীবী সৌদি আরবে কাজ করতে চান, বিশেষ করে কোম্পানি ভিসা নিয়ে। কারণ এই ভিসার মাধ্যমে একজন কর্মী একটি নির্দিষ্ট কোম্পানিতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতে পারেন। যেখানে কাজ, বেতন, আবাসন এবং অন্যান্য সুবিধা আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে।

কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন প্রায় সবার মনেই ঘোরে - “সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত?” ২০২৫ সালে এই বিষয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
কোম্পানি ভিসা কী?
কোম্পানি ভিসা বা এক্সপ্যাট ভিসা এমন একটি কাজের অনুমতিপত্র। এই অনুমতিপত্রের মাধ্যমে সৌদি আরবের একটি নির্দিষ্ট কোম্পানি, একজন বিদেশিকে তার কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ দিয়ে থাকে। এটি কাফালা সিস্টেম এর আওতাধীন হয়, যেখানে কোম্পানিই স্পন্সর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
সৌদি আরবে কোম্পানি ভিসায় চাকরির ধরণ
সৌদি আরবে কোম্পানি ভিসায় বিভিন্ন পেশায় কাজের সুযোগ থাকে। যেমন:
- নির্মাণ শ্রমিক
- ড্রাইভার
- ইলেকট্রিশিয়ান
- প্লাম্বার
- হাউজকিপার
- নিরাপত্তা রক্ষী
- কারখানা কর্মী
- সুপারভাইজার
- টেকনিশিয়ান
- আইটি ও একাউন্টিং পেশাজীবী
২০২৫ সালে সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত?
এই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন বিষয়ে নির্ভর করে, যেমন –
- কাজের ধরন
- অভিজ্ঞতা
- কোম্পানির মান
- শহর ও লোকেশন
- অতিরিক্ত সুবিধা
তবে গড় হিসেবে ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী নিচের মত একটি তালিকা পাওয়া যায় –
কাজের ধরন | মাসিক বেতন (সৌদি রিয়াল) | বাংলাদেশি টাকায় (প্রায়) |
---|---|---|
সাধারণ শ্রমিক | ৮০০ – ১২০০ রিয়াল | ২৩,৫০০ – ৩৫,০০০ টাকা |
নির্মাণ শ্রমিক | ১০০০ – ১৫০০ রিয়াল | ২৯,০০০ – ৪৩,০০০ টাকা |
হাউজকিপার | ৮০০ – ১২০০ রিয়াল | ২৩,৫০০ – ৩৫,০০০ টাকা |
ড্রাইভার | ১২০০ – ২০০০ রিয়াল | ৩৫,০০০ – ৫৮,০০০ টাকা |
টেকনিশিয়ান | ১৮০০ – ২৫০০ রিয়াল | ৫২,০০০ – ৭২,০০০ টাকা |
অফিস স্টাফ | ২০০০ – ৩০০০ রিয়াল | ৫৮,০০০ – ৮৭,০০০ টাকা |
নোটঃ বেতন ছাড়াও কোম্পানি আবাসন, খাবার ও মেডিকেল সুবিধা দিয়ে থাকে, যা মূল বেতনের বাইরেও একটি বড় সুবিধা।
কেন সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা এত জনপ্রিয়?
- নির্দিষ্ট ও চুক্তিভিত্তিক কাজ
- বেতন নির্ধারিত ও নির্ভরযোগ্য
- স্পন্সর করা কোম্পানির মাধ্যমে কাজ পাওয়া
- অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওভারটাইম সুবিধা থাকে
- আবাসন ও যাতায়াত ফ্রি থাকে
- ছুটি ও ভ্রমণ ব্যয় অনেক সময় কোম্পানিই বহন করে
কোম্পানি ভিসার প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে?
- চাকরিদাতা কোম্পানির অফারঃ প্রথমে সৌদি কোম্পানি বাংলাদেশের কোন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী চায়।
- চুক্তি ও মেডিকেল টেস্টঃ প্রার্থী চুক্তিতে সই করে, তারপর মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
- ভিসা ইস্যুঃ সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে কোম্পানি ভিসা ইস্যু করে।
- ট্রেনিং ও যাত্রাঃ কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ অনুযায়ী ট্রেনিং দেওয়া হয় এবং তারপর ফ্লাইট।
সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত – বিষয়টি বুঝে নেওয়া জরুরি
অনেকেই ভাবেন, সব কোম্পানি একই বেতন দেয়। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত, তা নির্ভর করে কাজের ওপর। একটি ভালো কোম্পানি একজন দক্ষ শ্রমিককে ২০০০ রিয়াল পর্যন্ত দিতে পারে, যেখানে দুর্বল কোম্পানি কম বেতন ও সীমিত সুবিধা দেয়।
সতর্কতা – প্রতারণা থেকে সাবধান
কিছু এজেন্সি অতিরিক্ত টাকা নিয়ে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়। সেজন্যঃ
- সরকারি লাইসেন্সধারী রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা করুন
- চুক্তিপত্র ভালোভাবে পড়ে বুঝে সই করুন
- ভুল তথ্য বা অতিরিক্ত ফি দাবি করলে সতর্ক থাকুন
ভবিষ্যতে আরও কোন খাতে বেতন বৃদ্ধি পেতে পারে?
সৌদি আরব বর্তমানে Vision 2030 পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন শিল্পখাতে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ বাড়াচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- কনস্ট্রাকশন
- স্বাস্থ্যখাত (নার্সিং, ক্লিনিক সহকারী)
- আইটি ও সফটওয়্যার সাপোর্ট
- গাড়ি মেরামত ও সার্ভিসিং
- কৃষি ও ল্যান্ডস্কেপিং
প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন (FAQ)
সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত?
এটি কাজের ধরন, কোম্পানির মান এবং লোকেশনের ওপর নির্ভর করে। গড়ে ৮০০ থেকে ৩০০০ রিয়াল পর্যন্ত বেতন হয়ে থাকে।
কোম্পানি ভিসায় ওভারটাইম সুবিধা থাকে কি?
হ্যাঁ, বেশিরভাগ কোম্পানি ওভারটাইম সুবিধা দিয়ে থাকে, যা মাসিক আয় আরও বাড়ায়।
কোম্পানি কি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে?
হ্যাঁ, সাধারণত কোম্পানিগুলি আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে।
কোম্পানি ভিসা ও আকামা একই জিনিস?
না, কোম্পানি ভিসা হচ্ছে কাজের ভিসা, আর আকামা হচ্ছে সৌদি আরবে বসবাসের আইনি পরিচয়পত্র।
সৌদি কোম্পানি ভিসা করতে কত খরচ লাগে?
বিষয়টি নির্ভর করে পদের ধরন ও এজেন্সির চার্জের ওপর। তবে গড়ে ১.৫ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
লেখক মন্তব্য
সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত – এটি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যদি আপনি সৌদি আরবে কাজ করতে চান। সঠিক তথ্য, সচেতনতা এবং একটি ভালো কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে আপনি ভালো বেতন ও সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন।
সুতরাং, সৌদি আরবে কাজের চিন্তা থাকলে আগে থেকেই পেশা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন, সরকারি অনুমোদিত এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলুন নিরাপদ ও সঠিক পথে।
আপনার মন্তব্যটি এখানে লিখুন
comment url