ইমোটিল এর কাজ কি, খাওয়ার নিয়ম ও দাম
ইমোটিল একটি বহুল ব্যবহৃত ওষুধ । ইমোটিল এর কাজ, খাওয়ার নিয়ম ও দাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এই ব্লগে । বিস্তারিত তথ্য জানতে হলে, সম্পূর্ণ ব্লগটি পড়বেন ।
ইমোটিল প্রাথমিকভাবে পেটের সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। ইমোটিল মূলত ডায়রিয়া এবং পাতলা পায়খানার উপশমের জন্য ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ইমোটিল সঠিকভাবে গ্রহণ করলে দ্রুত আরাম পাওয়া সম্ভব। এই আর্টিকেলে আমরা ইমোটিল এর কাজ কি, খাওয়ার নিয়ম, দাম ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ইমোটিল এর কাজ কি
ইমোটিল মূলত পেটের সমস্যা, বিশেষ করে ডায়রিয়া এবং পাতলা পায়খানার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ইমোটিল অন্ত্রের পেশিগুলির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে পেটের অস্বস্তি ও পায়খানার অতিরিক্ত তীব্রতা কমে আসে। সাধারণত ইমোটিল ব্যবহারের ফলে অন্ত্রের চলাচল ধীর হয় এবং জল শোষণ বৃদ্ধি পায়। যা পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার সমস্যার সমাধানের সহায়ক।
ইমোটিল এর মধ্যে থাকা সক্রিয় উপাদানটি হচ্ছে লোপেরামাইড । লোপেরামাইড অন্ত্রের সংকোচন বা মুভমেন্টকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এর ফলে শরীরের পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ডায়রিয়া কমে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায়, ইমোটিল গ্রহণ করলে দ্রুত ফলাফল পাবেন।
ইমোটিল এর দাম কত
ইমোটিল ওষুধটি ফার্মেসিতে সহজলভ্য মূল্যে পাওয়া যায়। ইমোটিল এর দাম ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, যা মূলত ফার্মেসি, ব্র্যান্ড এবং প্যাকেজিং এর উপর নির্ভর করে । তবে, ইমোটিল দুই মিলিগ্রাম এর পতি পিচ প্রায় ১ টাকা করে বিক্রি হয় । অর্থাৎ,
- ইমোটিল প্রতি পিচের দাম = ১৳
- ইমোটিল প্রতি স্ট্রিপের দাম = ১০৳
ওষুধের নাম | ইমোটিল ক্যাপসুল |
উপাদান | লােপেরামাইড হাইড্রোক্লোরাইড (২ মি.গ্রা.) |
প্রস্তুতকারক | স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি |
ইউনিট মূল্য | ৳ ১.00 (২০ x ১০: ৳ ২০০.০০) |
স্ট্রিপ মূল্য | ৳ ১০.০০ |
ইমোটিল খাওয়ার নিয়ম
যেকোনো ওষুধ খেতে হলে, নিয়ম জেনে খাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তেমনি ইমোটিল খেতে হলে ইমোটিল খাওয়ার নিয়ম জানতে হবে। ইমোটিল খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ নিয়ম এবং সতর্কতা মেনে চলা জরুরী । সাধারণত ইমোটিল ওষুধটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর দুই মিলিগ্রাম বা একটি ট্যাবলেট করে দেওয়া হয় । তবে ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৮ মিলিগ্রাম অর্থাৎ চারটি ট্যাবলেট এর বেশি খাওয়া উচিত নয় ।
শিশুদের ক্ষেত্রেও ইমোটিল খাওয়ার নিয়ম মেনে চলতে হবে । যেসব শিশুদের জন্য ইমোটিল ওষুধ ব্যবহৃত হয়, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ইমোটিল দেওয়া উচিত নয়। শিশুদের ক্ষেত্রে সঠিক মাত্রা নির্ধারণে চিকিৎসকের পরামর্শই সর্বোত্তম। ইমোটিল খাওয়ার আগে এবং পরে প্রচুর পানি পান করা উচিত, কারণ এটি শরীরে জল শোষণ বাড়ায় এবং ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা কমায় ।
যখন ডায়রিয়া চলাকালীন সময়ে ইমোটিল গ্রহণ করা হয়, তখন যতটা সম্ভব পরিস্কার ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করার জরুরী। ডায়রিয়া থেকে পুনরুদ্ধার হওয়ার জন্য খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরের হাইড্রেশনের মাত্রা ঠিক রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ইমোটিল কেন খায়
ইমোটিল মূলত দ্রুত ডায়রিয়া নিরাময়ে সাহায্য করে। যেসব পরিস্থিতিতে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার সমস্যা দেখা দেয়, যেমন খাদ্য বিষক্রিয়া, সংক্রমণ বা পেটের অস্বাভাবিক চলাচল, সেখানে ইমোটিল কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ইমোটিল অন্তরের পেশিকে শান্ত করে এবং অন্ত্রের মুভমেন্ট কে ধীরগতি করে। ফলে শরীর পানি শোষণ করতে পারে এবং পায়খানা আরো ঘন হয়।
প্রচুর পানি শোষণ করার ফলে, ডায়রিয়ার কারণে শরীরে পানি শূন্যতার ঝুঁকি কমে যায় । এছাড়াও ইমোটিল অন্ত্রের অস্বস্তি , মচমোচানি এবং তীব্র পেটের ব্যথার উপশমের সাহায্য করে। এজন্য ইমোটিলকে দ্রুত ডায়রিয়ার চিকিৎসার জন্য, অন্যতম প্রধান ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইমোটিল কি খালি পেটে খাওয়া যায় ?
ইমোটিল খালি পেটে খাওয়া যায়, তবে এটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকভাবে গ্রহণ করা উচিত। যদিও খালি পেটে খেলে দ্রুত কার্যকারিতা দেখা যায়, কিন্তু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটি পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে অনেক সময় ওষুধ কি খাবারের পর নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। খালি পেটে ইমোটিল খাওয়া হলে, ইমোটিল কার্যকর থাকে এবং পেটের সমস্যা দ্রুত উপশম করে।
আরো পড়ুনঃ দ্রুত গলা ব্যাথা কমানোর ওষুধ
দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার বা বেশি মাত্রায় এই ওষুধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। অতিরিক্ত ইমোটিল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং পেটে অন্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এই কারণে ইমোটিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের নির্দেশনা মানা অত্যন্ত জরুরী।
ইমোটিল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ইমোটিল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হলো। সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তেমন কোন ক্ষতি সাধন করে না। কিন্তু গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে আপনার, অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো লক্ষ্য করতে পারলেই, চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করবেন।
ইমোটিল এর সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- পেট ফাঁপা
- বমি বমি ভাব
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- মাথা ব্যথা
- মুখ শুকিয়ে যাওয়া
ইমোটিল এর গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- অন্ত্রের ব্লকেজ
- শ্বাসকষ্ট
- তীব্র পেটব্যথা
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা অতিরিক্ত মাথা ঘোরা
- এলার্জির প্রতিক্রিয়া
FAQs - প্রশ্নাবলী
ইমোটিল কেন খায় ?
ইমোটিল একটি ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণের ওষুধ, যা অন্ত্রের পেশিগুলির মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়রিয়া থেকে দ্রুত উপশম প্রদান করতে সাহায্য করে।
ইমোটিল এর কাজ কি ?
ইমোটিল এর কাজ হল অন্ত্রের মুভমেন্ট ভিড় করা এবং পানি শোষণ বৃদ্ধি করা। যেন পাতলা পায়খানা কম হয় এবং ডায়রিয়া কমে যায়।
ইমোটিল এর দাম কত ?
সাধারণত, বর্তমান সময়ে প্রতি ১ পিচ ইমোটিল এর দাম ১ টাকা।
ইমোটিল কি শিশুদের জন্য নিরাপদ?
শিশুদের জন্য ব্যবহার করতে হলে, আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ইমোটিল কাদের জন্য নিষিদ্ধ ?
যাদের অন্ত্রের ব্লকেজ বা গুরুতর অন্ত্রের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য ইমোটিল খাওয়া নিষেধ।
শেষ কথা
ইমোটিল একটি কার্যকরী ওষুধ । ইমোটিল আমাদের ডায়রিয়া ও পেটের বিভিন্ন সমস্যার নিরাময় এনে দেয়। আমাদের অবশ্যই জানা উচিত, ইমোটিল এর কাজ কি । ডায়রিয়া ও পেটের সমস্যার চিকিৎসায় দ্রুত নিরাময় এনে দেয় ইমোটিল ।
ইমোটিল খাওয়ার নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং ইমোটিল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তি পেতে হবে।প্রতি এক পিস ইমোটিল এর দাম ১৳, তাই অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। দিনে সাধারণত ৪ টি ট্যাবলেট এর বেশি খাওয়া যাবে না।
আপনার মন্তব্যটি এখানে লিখুন
comment url