ফ্যামোট্যাক সিরাপ কিসের ঔষধ - খাওয়ার ও তৈরির নিয়ম

ফ্যামোট্যাক সিরাপ কিসের ঔষধ ? ফ্যামোট্যাক সিরাপ কিভাবে খেতে হয় বা তৈরি করতে হয় ? আপনি কি জানেন, বাংলাদেশের ৮০% মানুষ জানে না এই সকল বিষয় সম্পর্কে। আজকের এই আর্টিকেলে ফ্যামোট্যাক সিরাপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ফ্যামোট্যাক সিরাপ কিসের ঔষধ - খাওয়ার ও তৈরির নিয়ম

ফ্যামোট্যাক সিরাপ বাংলাদেশের বাজারে বহুল পরিচিত একটি সিরাপ। ফ্যামোট্যাক সিরাপ সাধারণত গ্যাস্ট্রিক বা অম্লতার সমস্যা মোকাবেলায় ব্যবহার করা হয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা ফ্যামোট্যাক সিরাপ কিসের ঔষধ , ফ্যামোট্যাক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম , ফ্যামোট্যাক সিরাপ বানানোর নিয়ম এছাড়াও এর কাজ, উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করব।

ফ্যামোট্যাক সিরাপ কিসের ঔষধ


ফ্যামোট্যাক সিরাপ মূলত গ্যাস্ট্রিক, অম্লতা বা এসিডিটি এবং পেপটিক আলসার প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়। ফ্যামোট্যাক সিরাপ এ বিদ্যমান থাকা Famotidine নামক সক্রিয় উপাদান হজমের সময় পেটে অতিরিক্ত এসিড নিঃসরণ কমায়। যার ফলে বুক জ্বালাপোড়া, গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

তাছাড়াও ফ্যামোট্যাক সিরাপ এন্টিহিস্টামিন এইচ ২ রিসেপ্টর ব্লকার হিসেবে কাজ করে। যার ফলে পাকস্থলীর এসিড নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে। অনেক মানুষ বিভিন্ন কারণে গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্যও ফ্যামোট্যাক সিরাপ অনেক কার্যকরী একটি ওষুধ।

ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর কাজ কি


ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর কাজ অনেক রকম ভাবেই উপস্থাপন করা যায়। তবে প্রধানত গ্যাস্ট্রিক বিষয়টির উপর ফ্যামোট্যাক সিরাপ কাজ করে। নিচে ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর কাজ আলোচনা করা হলো -

  • গ্যাস্ট্রিক ও বুক জ্বালাপোড়া কমানোঃ ফ্যামোট্যাক সিরাপ পাকস্থলীতে অম্ল তার মাত্রা কমিয়ে বুক জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তি দূর করতে ভূমিকা পালন করে।
  • পেপটিক আলসার প্রতিরোধঃ ফ্যামোট্যাক সিরাপ পাকস্থলীর ক্ষত বা আলসার নিরাময় সহায়তা করে।
  • গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD): এসিড পেট থেকে খাদ্যনালীতে চলে আসা প্রতিরোধ করে।
  • অম্লতা নিয়ন্ত্রণঃ ফ্যামোট্যাক সিরাপ খাবার পর অতিরিক্ত এসিড নিঃসরণ রোধ করতে ভূমিকা পালন করে।
  • খাবার হজমে সহায়তাঃ যারা অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগেন, তাদের জন্য ফ্যামোট্যাক সিরাপ উপকারী একটি ওষুধ।

ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর দাম


বাজারে ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর দাম নির্ভর করে বিভিন্ন কোম্পানির উপর। তবে সাধারণত দাম ব্র্যান্ড, কোম্পানি এবং অঞ্চল ভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। বিভিন্ন ফার্মেসি ও অনলাইন মেডিকেল স্টোর থেকে ফ্যামোট্যাক সিরাপ সহজে সংগ্রহ করা যায়। নিচে ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর দাম উল্লেখ করা হলো -

  • ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর দাম = ৫৫৳ {50ml}

ফ্যামোট্যাক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম


প্রত্যেকটি ওষুধের মতই ফ্যামোট্যাক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম ও জানতে হবে। আপনি যদি ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর উপকারিতা ভোগ করতে চান, তাহলে ফ্যামোট্যাক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। একজন চিকিৎসকই কেবলমাত্র ফ্যামোট্যাক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম বলতে পারেন। কারন তিনি রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রেসক্রিপশন তৈরি করেন। তবে আমি আপনাকে ফ্যামোট্যাক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে কিছু টিপস দিতে পারি -

  • ডোজঃ সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে ১ থেকে ২ বার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • ডাক্তারের পরামর্শঃ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ডোজ গ্রহণ করা উচিত।
  • খাওয়ার সময়ঃ খাবার খাওয়ার আগে ও পরে উভয় সময়েই ফ্যামোট্যাক সিরাপ সেবন করতে পারবেন। তবে বুকে জ্বালাপোড়া বেশি হলে খাবারের ৩০ মিনিট আগে খাওয়া উপকারী।
  • বাচ্চাদের জন্য ডোজঃ শিশুদের ক্ষেত্রে সঠিক ডোজ নির্ধারণে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • ডোজ মিস হলে কি করবঃ কোন ডোজ যদি সময়মতো না নিতে পারেন কিংবা মিস করে ফেলেন, তাহলে মনে পড়ার সাথে সাথে তা গ্রহণ করুন। আর যদি পরবর্তী ডোজের সময় কাছাকাছি চলে আসে, তাহলে একসাথে দুইটি ডোজ গ্রহণ করবেন না। বাতিল হওয়ার ডোজটি বাদ দেন। নিয়মমতো আবার ডোজ নিতে থাকেন।

ফ্যামোট্যাক সিরাপ বানানোর নিয়ম


ফ্যামোট্যাক সিরাপ সেবন করার জন্য সর্বপ্রথম, ফ্যামোট্যাক সিরাপ বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। যদিও ফ্যামোট্যাক সিরাপ সাধারণত প্রস্তুত অবস্থায় পাওয়া যায়, তবুও কিছু ওষুধ কোম্পানি সিরাপ তৈরির জন্য পাউডার ফ্রম সরবরাহ করে। তাই অনেকেই বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে চায় । নিচে ফ্যামোট্যাক সিরাপ বানানোর নিয়ম দেওয়া হলো -

  • পরিমাণ মতো পানি মেশানোঃ নির্দিষ্ট পরিমাণে ফিল্টার করা বা সেদ্ধ ঠান্ডা পানি যোগ করতে হবে। পানির পরিমাণ আপনি প্যাকেটেই দেখতে পাবেন।
  • ভালোভাবে ঝাকানঃ পাউডার এবং পানি মিশ্রিত করার পর বোতলটি ভালোভাবে ঝাকিয়ে নিতে হবে। এর ফলে মিশ্রণটি সুন্দর হবে।
  • স্টোরেজঃ ফ্যামোট্যাক সিরাপ তৈরি হওয়ার পর ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।

ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর উপকারিতা


ফ্যামোট্যাক সিরাপ ব্যবহারে অনেক উপকারিতা ভোগ করা যায়। নিচে ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো -

  • ফ্যামোট্যাক সিরাপ বুকের জ্বালাপোড়া এবং গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি প্রদান করতে সাহায্য করে।
  • ফ্যামোট্যাক সিরাপ পেপটিক আলসার নিরাময়ে কার্যকর।
  • ফ্যামোট্যাক সিরাপ গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) নিয়ন্ত্রণে আনতে ভূমিকা পালন করে।
  • ফ্যামোট্যাক সিরাপ পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা কমিয়ে হজমের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।
  • দীর্ঘ মেয়াদী অম্লতার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়ক।

ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া


প্রত্যেকটি ওষুধেরই কিছু না কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকেই। ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে -

  • মাথাব্যথাঃ অনেকের ক্ষেত্রে ফ্যামোট্যাক সিরাপ মাথা ব্যাথা সৃষ্টি করতে পারে।
  • ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যঃ হজম প্রক্রিয়ায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • এলার্জিঃ চুলকানি, ফুসকুড়ি বা ত্বকের প্রদাহ হতে পারে।
  • বমি বমি ভাবঃ কিছু ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে বমি বা অসস্তি কর অনুভূতি ঘটতে পারে।
  • ঘুম ঘুম ভাবঃ ফ্যামোট্যাক সিরাপ খাওয়ার পর অনেক সময় ঘুম ঘুম অনুভূতি দেখা দেয়।
যদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুরুতর হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

ফ্যামোট্যাক সিরাপ ব্যবহারে সতর্কতা


ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দুটোই লক্ষ্য করা হয়েছে। তাই ফ্যামোট্যাক সিরাপটি সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। নিচে ফ্যামোট্যাক সিরাপ ব্যবহারের কিছু সতর্কতা উল্লেখ করা হয়েছে -

  • গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রেঃ এ অবস্থায় ফ্যামোট্যাক সিরাপ গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরী।
  • এলার্জিঃ যদি ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর কোন উপাদানের প্রতি এলার্জি থাকে, তবে এটি ব্যবহার করবেন না।
  • অন্যান্য ওষুধের সাথে পারস্পরিক ক্রিয়াঃ কিছু ওষুধের সাথে ফ্যামোট্যাক সিরাপ পারস্পরিক ক্রিয়া করতে পারে। যার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেড়ে যেতে পারে।
  • লিভার বা কিডনির সমস্যাঃ যাদের লিভার বা কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা আছে, তাদেরকে ফ্যামোট্যাক সিরাপ বিশেষ সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
  • দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারঃ দীর্ঘদিন ধরে ফ্যামোট্যাক সিরাপ ব্যবহার করলে, চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। কারণ এটি দীর্ঘমেয়াদি কিছু স্বাস্থ্য জীবিত তৈরি করতে পারে।

শেষ কথা


ফ্যামোট্যাক সিরাপ একটি কার্যকরী ওষুধ। গ্যাস্ট্রিক, বুক জ্বালাপোড়া এবং পেপটিক আলসারের মত সমস্যা দ্রুত উপশম ঘটাতে ফ্যামোট্যাক সিরাপ ভূমিকা অপরিসীম। ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর উপকারিতা ভোগ করতে হলে এবং ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তি পেতে হলে, অবশ্যই ফ্যামোট্যাক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। তাছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফ্যামোট্যাক সিরাপ বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। আশা করি ফ্যামোট্যাক সিরাপ কিসের ঔষধ , ফ্যামোট্যাক সিরাপ এর কাজ কি এই সকল বিষয়ে আপনার আর কোন প্রশ্ন নেই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার মন্তব্যটি এখানে লিখুন

comment url