১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ ও খাওয়ার নিয়ম

১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ানো খুবই সংবেদনশীল বিষয়। বাচ্চারা শরীরের পুষ্টি ঠিকমতো না পেলে ভ্রমণ হলে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তাই বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর পূর্বে, অবশ্যই এর লক্ষণগুলো এবং সঠিকভাবে খাওয়ার নিয়ম জেনে তারপর খাওয়ানো উচিত। এজন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই ব্লগে। ব্লগটি পরলে আপনার এই বিষয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ ও খাওয়ার নিয়ম

১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধের নাম


বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর আগে, আপনার কিছু কৃমির ওষুধের নাম জানা খুবই দরকার। এই অনুচ্ছেদে আমরা বহুল ব্যবহৃত কিছু ১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ নিয়ে আলোচনা করেছি। ঔষধগুলোর নাম জানুন -

  • অ্যালবেন্ডাজল (Albendazole)
  • পাইরেন্টেল পামোট (Pyrantel Pamoate)
  • মেবেন্ডাজল (Mebendazole)

১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ


উপরের অনুচ্ছেদটিতে শুধুমাত্র ঔষধগুলোর নাম বলা হয়েছে । এই অনুচ্ছেদটিতে ঔষধ গুলোর বিষয়ে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করা হবে। ১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এই বিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে, কেননা এটি বাচ্চাদের সুস্থতার জন্য খাওয়ানো হয়।

সাধারণত ডাক্তাররা কৃমির সমস্যার জন্য, এই তিনটি ঔষধ প্রেসক্রাইব করে। তবে সব ডাক্তার এই ওষুধগুলো প্রেসক্রাইব করে এমন বিষয় নয়। অনেক ডাক্তার বাচ্চার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে, অন্যান্য ঔষধ সেবন করার পরামর্শ দিতে পারেন।উপরের তিনটি ঔষধ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো -

  • অ্যালবেন্ডাজল (Albendazole): এটি এক ধরনের বিস্তৃত কার্যকারিতা সম্পন্ন কৃমির ঔষধ। ১ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য সাধারণত এটি নিরাপদ ধরা হয়। ১ বছরের থেকে কম বয়সী শিশুদের জন্য, সাধারণত ১ বার ২০০ মিলিগ্রামের মাত্রা ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে অবশ্যই বয়স এক বছরের কাছাকাছি থাকতে হবে।
  • পাইরেন্টেল পামোট (Pyrantel Pamoate): এটি কৃমির বিরুদ্ধে কার্যকর এবং শিশুদের জন্য প্রায়ই ব্যবহৃত একটি ঔষধ। সাধারণত এটি ১ বার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে পুনরায় ২ সপ্তাহ পর ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • মেবেন্ডাজল (Mebendazole): ২ বছরের উপরে বাচ্চাদের জন্য এই ঔষধটি ব্যবহার করা হয়। তবে ডাক্তার কখনো কখনো এক বছরের উপরে বাচ্চাদের জন্যও এই ঔষধটি প্রেসক্রাইব করেন।
এই ধরনের ঔষধ ব্যবহার করার আগে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরী। চিকিৎসক আপনার শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সঠিক পরিমাণে ও সময়ে ঔষধ প্রেসক্রাইব করবেন। কোন ঔষধি নিজে থেকে শিশুকে খাওয়াবেন না, কারণ এটি শিশুর শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আপনি যদি চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে না পারেন, তাহলে আশেপাশের হাতুড়ে ডাক্তার কিংবা ফার্মাসিস্টের সাথে যোগাযোগ করে ঔষধ সেবন করাবেন।

১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির লক্ষণ


১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর পূর্বে, আপনি কিছু লক্ষণ দেখে নেবেন। ১ বছরের বাচ্চাদের কৃমি হলে, কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। সেই লক্ষণ গুলো খেয়াল রাখা উচিত। এতে আপনি ডাক্তারকে সঠিকভাবে বুঝাতে পারবেন। কৃমির ধরন ও শিশুর শারীরিক অবস্থার ওপর লক্ষণগুলো নির্ভর করে। কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো -

  • পেট ব্যথাঃ বাচ্চার পেটে নিয়মিত ব্যাথা হতে পারে, ঔষধ খাওয়ার পরও ব্যথাটি লক্ষণ করতে পারবেন। কৃমি অন্ত্রে থেকে খাবার খেয়ে নেয়, ফলে পেটের সমস্যা দেখা দেয়।
  • ওজন কমে যাওয়াঃ কৃমির কারণে অনেক শিশুর ক্ষুধা কমে যায় বা অনেক সময় বেড়ে যায়। এতে ওজন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এছাড়াও শিশু সঠিকভাবে বৃদ্ধি নাও হতে পারে।
  • শরীর দুর্বলঃ কৃমি শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করে নেয়, যা বাচ্চাকে দুর্বল বা ক্লান্ত করে তোলে।
  • পায়খানায় কৃমিঃ শিশুর পায়খানার সঙ্গে ছোট সাদা কৃমি বা ডিম দেখা দিতে পারে। এটি কৃমির সবচেয়ে দৃশ্যমান লক্ষ্য গুলোর মধ্যে একটি।
  • মলদ্বারে চুলকানিঃ বাচ্চারা প্রায়ই মলদ্বার চুলকাতে থাকে, বিশেষ করে রাতে। এটি পিনওয়ার্ম বা ছোট কৃমির কারণে হতে পারে।
  • পেট ফুলে যাওয়াঃ কিছু বাচ্চার পেট ফুলে থাকতে পারে, যদিও তারা বেশি খাদ্য গ্রহণ করে না। এটি কৃমির সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।
  • বমি বমি ভাবঃ কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চারা বমি করতে পারে বা বমি বমি অনুভব করতে পারে।
  • ঘুমের সমস্যাঃ মলদ্বারে চুলকানি বা পেট ব্যথার কারণে বাচ্চার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • ত্বকে ফুসকুড়িঃ কিছু কৃমির সংক্রমনের শিশুর ত্বকে ফুসকুড়ি বা চুলকানি দেখা দিতে পারে।
  • রক্তশূন্যতাঃ কিছু কৃমি শরীর থেকে রক্ত চুষে নেয়, যার ফলে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে। এর ফলে শিশুর ত্বক ফ্যাকাশে দেখা যাবে এবং শিশু সবসময় ক্লান্ত থাকবে।
যদি এই লক্ষণ গুলো দেখা যায়, তবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।কৃমির ঔষধ এবং চিকিৎসা শিশুর শরীরের জন্য নিরাপদভাবে, কেবল ডাক্তাররাই ঠিক করতে পারেন।

১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম


১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর জন্য অবশ্যই নিয়ম জানা উচিত। এক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কৃমির ধরন, শিশুর ওজন এবং তার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ঔষধের ডোজ এবং ব্যবহারের নিয়ম দেওয়া হয়। সাধারণভাবে কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর কিছু নিয়ম নিচে দেওয়া হলো-

  • ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াঃ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার বাচ্চার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সঠিক ঔষধ ও ডোজ নির্ধারণ করবেন।
  • খালি পেটে খাওয়ানঃ কৃমির ঔষধ সাধারণত খালি পেটে খাওয়ানো হয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খাওয়ানো সবচেয়ে ভালো।
  • প্রয়োজনীয় ডোজঃ শিশুর ওজন এবং বয়সের উপর ভিত্তি করে ডোজ নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত এক বছরের নিচে কিন্তু কাছাকাছি এরকম বয়সে শিশুদের জন্য ২০০ মিলিগ্রাম ১ বার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় । এক বছরের বেশি হলে ৪০০ মিলিগ্রাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • ঔষধ পুনরায় খাওয়ানোঃ অনেক সময় ডাক্তার পরামর্শ দেন কৃমির ঔষধ ২ সপ্তাহ বা ১ মাস পর আবার পুনরায় খাওয়ানোর।
  • পানির পরিমাণ বাড়ানোঃ কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর শিশুর শরীরে পানির ঘাটতি এড়ানো উচিত। এই জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাতে হবে। এতে কৃমির সংক্রমণ থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়। এখানে খাওয়ানোর পরই পানি খাওয়াতে হবে এমন কোন কথা বলা হয়নি। যখন শিশু পানি পান করে, সেই সময়গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
  • পরিবারের অন্যান্য সদস্যর পরীক্ষাঃ কৃমির সংক্রমণ অনেক সময় একটি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তাই পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরও কৃমির জন্য পরীক্ষা করা উচিত।
  • পায়খানা চেক করাঃ কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর পর শিশুর পায়খানার ধরন পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু সময় পায়খানার সঙ্গে কৃমি বেরিয়ে আসতে পারে বা ডায়রিয়া হতে পারে। সাধারণত একটি স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে। তবে সমস্যা বাড়লে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।
  • পুনরায় সংক্রমণ প্রতিরোধঃ কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর পর পুনরায় সংক্রমণ এড়াতে শিশুর হাত ভালোভাবে ধোঁয়া, নখ কেটে রাখা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বিছানা পত্র ব্যবহার করানো এবং খেলনা গুলি পরিষ্কার রাখা জরুরী।
এই নিয়মগুলি মেনে চললে, কৃমি সংক্রান্ত সমস্যা থেকে শিশু দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে পারবে।

শেষ কথা


১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ বাছাই করুন, খাওয়ানোর নিয়ম এবং লক্ষণ ভালোভাবে জেনে, চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ঔষধ সেবন করানো সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। কৃমির চিকিৎসার পর বাচ্চাদের সুষম খাদ্য এবং পর্যাপ্ত পানি খাওয়াবেন। তাছাড়া নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। এইসব বিষয় মাথায় রেখে কৃমির চিকিৎসা করলে, বাচ্চারা দ্রুত সুস্থতা লাভ করতে পারবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার মন্তব্যটি এখানে লিখুন

comment url