৮ মাসের শিশুর জ্বর হলে করণীয়
৮ মাসের শিশুর জ্বর হলে, অতিরিক্ত টেনশন বা চিন্তা করার দরকার নেই। স্বাভাবিকভাবেই ৮ মাস বয়সী শিশুদের জ্বর হয়ে থাকে। কারণে এই সময় তারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। তবে জ্বর আসাটা অন্য কোন একটি রোগের লক্ষণ হতে পারে।
৮ মাস বয়সী শিশুরা সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকে, তাই তাদের মাঝে জ্বর হওয়া অস্বাভাবিক কিছুই নয়। তবে শিশুরা যখন জ্বরে ভোগে, তখন পিতা-মাতার উদ্বিগ্ন হওয়াটা স্বাভাবিক। জ্বর শিশুর শরীরের একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া যা সাধারণত ইনফেকশন বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
এই ব্লগে আমরা ৮ মাসের শিশুর জ্বর হলে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং কিভাবে এই অবস্থায় শিশুদের সঠিক যত্ন নেওয়া উচিত, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
জ্বরের সংজ্ঞা ও কারণ
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, জ্বর আসলে কি এবং এটি কেন হয় । জ্বর হলো শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, তাপমাত্রা সাধারণত ১০০.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট অথবা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা তার ওপরে হলে জ্বর হিসাবে ধরা হয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশ উদ্বেগ জনক হতে পারে, কেননা তাদের ইমিউন সিস্টেম এখনো সম্পূর্ণভাবে গড়ে ওঠেনি। তাহলে কেন শিশুদের জ্বর হয়? প্রশ্নের উত্তর টি পেতে নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ুন -
জ্বর সাধারণত ইনফেকশনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যায়। যেমন -
- ভাইরাল সংক্রমণ ( সর্দি)
- ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ
- টিকা দেওয়ার পর প্রতিক্রিয়া
- দাঁত ওঠার সময় ( যদিও এটি খুবই সাধারণ এবং সাধারণত জ্বর গুরুতর হয় না।)
জ্বরের লক্ষণ এবং শিশুর মনোভাব
৮ মাসের শিশুরা সাধারণত মুখে কথা বলতে পারে না, তাই তারা কেবল তাদের আচরণ এবং শারীরিক লক্ষণ গুলির মধ্যে তাদের অস্বস্তি প্রকাশ করে। পিতা মাতার জন্য তাদের লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের জ্বরের কিছু সাধারন লক্ষণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো -
- শরীর গরম অনুভূত হওয়া
- ঘর্মাক্ত হওয়া বা শীতল হওয়া
- চঞ্চলতা, কান্নাকাটি
- খেতে অনিচ্ছুক হওয়া
- ঘুম কম হওয়া
- খেলার প্রতি আগ্রহ হারানো
- দ্রুত বা ভারী শ্বাস নেওয়ার
শিশুর মধ্যে যদি লক্ষণ গুলি খেয়াল করেন, তাহলে তখনই শিশুর শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করবেন। কারন এই লক্ষণগুলো জ্বর আসার লক্ষণ। তাপমাত্রা সাধারণত ১০০.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট অথবা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর বেশি হলে মনে করবেন জ্বর এসেছে।
জ্বর হলে কি করনীয়
শিশুর জ্বর হওয়া পিতা-মাতার জন্য একটি অস্বস্তিকর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। শিশুর জ্বর হলে, আপনি নিচের পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করতে পারেন -
শিশুর তাপমাত্রা পরিমাপ করুন
যদি আপনার মনে হয় আপনার শিশুর জ্বর হতে পারে, প্রথমেই তাপমাত্রা পরিমাপ করুন। শিশুদের ক্ষেত্রে রেক্টাল থার্মোমিটার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। তবে আপনি কান বা কপাল এ ব্যবহৃত থার্মোমিটারও ব্যবহার করতে পারেন। তাপমাত্রা সঠিকভাবে পরিমাপ করা খুবই জরুরী। এতে আপনি বুঝতে পারবেন শিশুর জ্বর কখন বাড়ছে বা কখন কমছে। আপনি এ বিষয়টি বুঝতে পারলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবেন । তাই সর্বপ্রথম শিশুর তাপমাত্রা পরিমাপ করতে হবে।
শিশুকে হালকা কাপড় পরান
জ্বর হলে শিশু শরীর থেকে তাপ মিশ্রণ হতে সাহায্য করতে হবে। তাই শিশুকে হালকা এবং আরামদায়ক কাপড় পরিয়ে রাখুন। খুব বেশি কাপড় বা কম্বল ব্যবহার করবেন না, কারণ এগুলো তাপ আটকে রাখতে পারে, যা শিশুর তাপমাত্রা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবে বাঙ্গালীদের অনেক ঘরে ঘরে, জ্বর আসলেই কম্বল ব্যবহার করে শরীর থেকে তাপ বের করে।
শিশুকে পর্যাপ্ত তরল দিন
জ্বরের সময় শিশুর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল বের হয়ে যেতে পারে, যা ডিহাইড্রেশন ঘটাতে পারে। আপনার শিশুকে বারবার বুকের দুধ বা ফর্মুলা খাওয়ান। যদিও শিশু অতিরিক্ত তরল পান করতে চাইবে না, তবুও খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। যদি তাও না হয়, তাহলে কিছুটা তরল খাবার, ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন দিতে পারেন। এটি শরীরে তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করতে ভূমিকা পালন করে।
শিশুকে ঠান্ডা পানির সেক দিন
শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমাতে, শরীরে ঠান্ডা পানির সেক দেওয়া যেতে পারে। এর জন্য নরম কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে, শিশুর কপালে, বগলে এবং পায়ের তলায় আলতো ভাবে মুছে দিন। তবে মনে রাখবেন খুব ঠান্ডা পানি বা বরফের ব্যবহার করবেন না। কেননা এটি শিশুর শরীরে শক সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে জ্বর বৃদ্ধি পেতে পারে।
শিশুকে বিশ্রামে রাখুন
জ্বরের সময় শিশুকে বিশ্রামে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুব বেশি হাঁটাহাঁটি বা খেলাধুলা এড়িয়ে চলুন। বিশ্রাম শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে। শিশুর ইনফেকশন থেকে দ্রুত সাড়িয়ে তুলতে, শিশুকে বিশ্রামে রাখুন।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দিন
যদি শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট অথবা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর বেশি হয় তাহলে শিশুর জ্বর এসেছে বুঝে নিতে হবে। শিশুর জ্বর যদি এরকম তাপমাত্রায় হয়ে থাকে, তাহলে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে পারবেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করবেন। তবে শিশুকে কখনোই নিজে থেকে ওষুধ দেবেন না, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ প্রয়োগ করবেন না। প্রতিটি শিশুর অবস্থার উপর ভিত্তি করে ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
যদিও জ্বর অনেক সময় সাধারন হয়, কিছু ক্ষেত্রে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন হতে পারে। যদি আপনার শিশুর জ্বরের সাথে নিম্নলিখিত কোন লক্ষণ দেখা যায়, তবে দেরি না করে, এখনই ডাক্তারের পরামর্শ নেই -
- জ্বর ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হবে
- জ্বরের সাথে শরীরের রেস দেখা দিলে
- শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হলে
- শিশু অত্যন্ত দুর্বল বা সারা না দিলে
- খিচুনি বা অস্বাভাবিকভাবে কাপুনি হলে
- শিশুর হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলে
- ডায়রিয়া বা বমি হলে
এছাড়াও যদি আপনি আপনার শিশুর আচরণের কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তাহলে আপনি সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করলে,আশা করি আপনার শিশুর জ্বর অল্প কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে।
জ্বর প্রতিরোধে কি করতে হবে
জ্বর একটি প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলেও, কিছু প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়ে আপনি আপনার শিশুকে সুস্থ রাখতে পারবেন। উক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো -
- শিশুকে নিয়মিতভাবে সঠিকভাবে টিকা দিন
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন, বিশেষ করে শিশু যা স্পর্শ করে তা পরিষ্কার রাখুন।
- পরিবারের সদস্য এবং আশেপাশের লোকজনকে নিয়মিত হাত ধোওয়ার পরামর্শ দিন।
- শিশুকে ধুলোবালি এবং সংক্রামণ থেকে দূরে রাখুন।
- সঠিক পুষ্টিকর খাদ্য ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন নিশ্চিত করুন, যেন শিশুর ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়।
FAQs
৮ মাসের শিশুদের জ্বর আসা নিয়ে, সাধারণ মানুষের কিছু প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। সেই প্রশ্নগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রশ্ন নিম্নে উল্লেখ করা হলো -
- প্রঃ ৮ মাসের শিশুর জন্য কোন তাপমাত্রায় জ্বর হিসেবে ধরা হয়?
- উঃ ৮ মাসের শিশুর জন্য সাধারণত ১০০.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট অথবা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এই তাপপাত্রা বা এর বেশি তাপমাত্রাকে জ্বর হিসেবে ধরা হয়।
- প্রঃ ৮ মাসের শিশুর জ্বরের তাপমাত্রা পরিমাপ করার জন্য কোন যন্ত্রটি ভালো কাজ করে?
- উঃ রেক্টাল থার্মোমিটার ভালো কাজ করে।
- প্রঃ জ্বরের সময় শিশুকে কোন ওষুধ খাওয়ানো উচিত?
- উঃ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া, কোন ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ওষুধ খাওয়ানো উচিত।
- প্রঃ দাঁত ওঠার সময় শিশুর জ্বর কি স্বাভাবিক?
- উঃ হ্যাঁ, দাঁত ওঠার সময় শিশুর জ্বর স্বাভাবিক।
- প্রঃ ৮ মাসের শিশুর জ্বর হলে কি টিকা বন্ধ রাখা উচিত?
- উঃ যদি আপনার শিশুর জ্বর থাকে, তবে টিকা দেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু ক্ষেত্রে টিকা দেওয়ার সময় পরিবর্তন করা হতে পারে।
- প্রঃ জ্বর হলে শিশুকে গোসল করানো যাবে কি?
- উঃ হ্যাঁ করানো যাবে। তবে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো যাবে।
লেখক মন্তব্য
৮ মাস বয়সী শিশুর জ্বর হলে, সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের জ্বর সাধারণত ইনফেকশনের ফলস্বরূপ ঘটে, যা প্রায়ই স্বাভাবিক উপায়ে সারিয়ে তোলা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়া অপরিহার্য। সঠিকভাবে তাপমাত্রা পরিমাপ, তরল সরবরাহ, হালকা কাপড় এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে শিশুরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
আপনার মন্তব্যটি এখানে লিখুন
comment url