কিভাবে তাড়াতাড়ি মোটা হবো? - কিভাবে দ্রুত মোটা হওয়া যায়?
মোটা হওয়া বা ওজন বাড়ানোর যতটা সহজ মনে হয়, ততটা সহজ নয়। অনেক মানুষ চাইলেও মোটা হতে পারেন না এবং তাদের মধ্যে অনেকেই সঠিকভাবে মোটা হওয়ার উপায় খুঁজে পান না। আমরা আলোচনা করব কিভাবে দ্রুত মোটা হওয়া যায় এবং এর জন্য কার্যকর কিছু পদ্ধতি ও টিপস সম্পর্কে ।
মোটা হওয়ার উপায়
মোটা হওয়ার জন্য মানুষের মাথায় যে প্রশ্নগুলো ঘোরে সেগুলো হল-
- কি কি খাবার খেলে মানুষ মোটা হয়?
- সকালে খালি পেটে কি কি খেলে ওজন বাড়ে?
- মোটা হওয়ার জন্য কোন ব্যায়াম করা উচিত?
- কিভাবে তাড়াতাড়ি মোটা হবো?
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি এটি আপনাদের জন্য খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি হবে।
কি কি খাবার খেলে মানুষ মোটা হয়?
ওজন বাড়ানোর জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। মোটা হতে হলে প্রথমে আপনাকে ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। কিন্তু ক্যালোরের মান যেমন দেখতে হবে, তেমনি খাবার জন্য পুষ্টিকর হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। নিচে এমন কিছু খাবার উল্লেখ করা হলো যা মোটা হতে সাহায্য করেঃ-
- কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারঃ ভাত, আলু, রুটি ইত্যাদি কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার বেশি পরিমাণে খেলে দ্রুত মোটা হওয়া যায়। এগুলো শরীরকে ক্যালরি সরবরাহ করে যা ওজন বাড়াতে সহায়ক।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ প্রোটিন শরীরের পেশী তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই মাছ, মাংস ,ডিম ও ডাল ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
- ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবারঃ ওজন বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের চাহিদা অনেক বেশি। বাদাম, চিজ,বাটার ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সমিত খাবার খেলে ওজন বাড়ে।
- ফলমূল ও শাকসবজিঃ কলা ,আম, পেঁপে, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলো শরীরের ভিটামিন এবং মিনারেল এর চাহিদা পূরণ করে।
- দুধ ও দুধ্বজাত খাবারঃ দুধ চিজ মাখন ইত্যাদুধ খাবার ক্যালোরি ও প্রোটিন যুক্ত খাবার, এগুলো দ্রুত ওজন বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
সকালে খালি পেটে কি কি খেলে ওজন বাড়ে?
সকালের খাবার ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকালে খালি পেটে কিছু বিশেষ খাবার খেলে ওজন দ্রুত বাড়ে। এখানে এমন কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যা সকালে খালি পেটে খেলে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে-
- গরুর দুধঃ সকালে খালি পেটে এক গ্লাস গরুর দুধ পান করা ওজন বাড়ানোর একটি কার্যকরী উপায়। দুধের প্রোটিন ক্যালসিয়াম এবং ক্যালরি মিশ্রণ রয়েছে যা, শরীরের ওজন বাড়াতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- কলা ও দুধঃ একটি বা দুটি কলা এক গ্লাস দুধের সাথে খেলে তা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। কলায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে এবং দুধের প্রোটিন থাকে যা ওজন বৃদ্ধির জন্য উপকারী।
- বাদাম ও মধুঃ খালি পেটে কয়েকটি বাদাম এবং এক চামচ মধু খেলে শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় এবং ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
- গমের রুটি ও মাখনঃ সকালে নাস্তা গমের রুটির সাথে মাখন খেলে তা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। মাখন ফ্যাট থাকে, যা শরীরের ক্যালরি চাহিদা পূরণ করে।
- ডিমঃ সকালের নাস্তায় ডিম খাওয়া ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে যা পেশির গঠনে সহায়তা করে এবং ওজন বাড়ায়।
মোটা হওয়ার জন্য কোন ব্যায়াম করা উচিত?
এতদিন মানুষ শুনেছেন যে ব্যায়াম করলে শরীরের ওজন কমানো যায়। কিন্তু কিছু কিছু ব্যায়াম আছে যেগুলো মোটা হতে সাহায্য করে। মোটা হতে গেলে শুধু খাবার খেলে হবে না, বিশেষ কিছু ব্যায়াম করা জরুরী। ব্যায়াম শরীরের পেশি গঠন করে এবং শরীরের ফ্যাটের অনুপাতে বেশি পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। নিচে এমন কিছু ব্যায়াম উল্লেখ করা হলো যা মোটা হতে সাহায্য করবে-
- ভার উত্তোলনঃ জিমে কে ওজন উত্তোলন করলে বা ভার উত্তোলন করলে শরীরের বেশি বাড়ে। এটি শরীরের ফ্যাটের সাথে পেশির অনুপাত ঠিক রাখে এবং ওজন বাড়ায়।
- স্কোয়াটঃ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম। যা পেশী গঠনে অত্যন্ত কার্যক্রম। এটি পায়ের পেশি ও কোর পেশি শক্তিশালী করে এবং ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
- ডেড লিফটঃ ডেড লিফট একটি শক্তিশালী ব্যায়াম। এটি আমাদের শরীরের সমস্ত পেশি কাজে লাগায় এবং পেশির বৃদ্ধি ঘটায়।
- বেঞ্চ প্রেসঃ বেঞ্চ প্রেস এ বুক কাঁধ এবং হাতের পেশী গঠন হয়। এটি শরীরের পেশির গঠন বাড়িয়ে দেয় এবং ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- পুশ আপঃ পুশ আপ করতে খুব বেশি সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না, কিন্তু এটি খুবই কার্যকর। হাত এবং কোরোর পেশী শক্তিশালী করে এবং ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
কিভাবে তাড়াতাড়ি মোটা হবো?
তাড়াতাড়ি মোটা হওয়ার জন্য আপনাকে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। কেবল বেশি খেয়ে মোটা হওয়া সম্ভব নয়, বরং এর জন্য সঠিক পুষ্টি ব্যায়াম এবং জীবনযাত্রার প্রয়োজন। নিচে তাড়াতাড়ি মোটা হওয়ার জন্য কিছু কার্যকর পদ্ধতি দেয়া হলো-
- নিয়মিত খাবার খাওয়াঃ খাবার খাওয়ার সময় নির্দিষ্ট করে রাখা উচিত এবং প্রতিদিনের ক্যালরি চাহিদা অনুযায়ী খাবার খাওয়া উচিত। প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর খাবার খাওয়া উচিত যাতে শরীরের ক্যালরির ঘাটতি না ঘটে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রামঃ পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম না পেলে শরীর মোটা হতে পারে না। ঘুমের সময় শরীরের হরমোন ব্যালেন্স তৈরি হয় যা ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- স্ট্রেস মুক্ত থাকাঃ স্ট্রেস ওজন বৃদ্ধির প্রধান শত্রু। স্ট্রেস মুক্ত থাকতে হবে এবং মানসিক চাপ কমাতে হবে, যাতে শরীরের হরমোন ঠিক মতো কাজ করতে পারে।
- সাপ্লিমেন্ট নেওয়াঃ যদি খাবার থেকেই পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া সম্ভব না হয়, তবে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। তবে সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- নিয়মিত ব্যায়ামঃ ব্যায়াম করতে হবে, যাতে পেশি গঠন হয় এবং শরীরের ফ্যাটের পরিমাণ বাড়ে। ব্যায়াম করার সময় শরীরের উপর বাড়তি চাপ না পড়ে , সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মোটা হওয়া সহজ নয়, তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটি সম্ভব। আপনার খাদ্য তালিকা ব্যায়াম এবং জীবনযাত্রা যদি সঠিক হয়, তবে আপনি দ্রুতই আপনার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাই কখনো হাল ছাড়বেন না।
মোটা হওয়ার সম্পর্কে কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিগণের কথা
মোটা হওয়া বা স্বাস্থ্যকর ওজন অর্জন সম্পর্কে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তি এবং প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ গন বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। যদিও সরাসরি মোটা হওয়ার বিষয়ে অনেকের বক্তব্য খুব বেশি নেই, তবুও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তাদের বক্তব্য থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। নিচে কিছু বিখ্যাত ব্যক্তির বক্তব্য উল্লেখ করা হলো-
- মহাত্মা গান্ধীঃ স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে “ আপনি যা খান, আপনি ঠিক তাই।” শরীরের ওজন এবং স্বাস্থ্যের ওপর খাবারের গভীর প্রভাব রয়েছে, এবং এই জন্য খাদ্য তালিকা নির্ধারণের সচেতন হওয়া উচিত।
- হিপোক্রেটিসঃ পশ্চিমা চিকিৎসা বিদ্যার জনক হিপোক্রেটিস বলেছেন "Let food be thy medicine and medicine be thy food."এর মাধ্যমে তিনি বুঝিয়েছেন যে খাবার এই স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখার মূল উৎস হওয়া উচিত।
- ডা. দীপক চোপড়াঃ প্রখ্যাত চিকিৎসক এবং লেখক দীপক চোপড়া বলেছেন, "Every time you eat or drink, you are either feeding disease or fighting it."অর্থাৎ, আপনি যা খান , তা আপনার শরীরের ওজন এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। অতএব মোটা হওয়ার জন্য বা ওজন বাড়ানোর জন্য সঠিক খাদ্য নির্বাচন করার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- বুদ্ধঃ বুদ্ধ জীবন আদর্শ স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার উপর জোর দেয়। তিনি বলেছেন, "To keep the body in good health is a duty… otherwise we shall not be able to keep our mind strong and clear." অর্থাৎ, একটি সুস্থ শরীর মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য, এবং এর জন্য শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- মাইকেল পোলানঃ মাইকেল পোলান, খাদ্য পুষ্টি বিষয়ে বিখ্যাত লেখক। তিনি বলেছেন, "Eat food. Not too much. Mostly plants." অর্থাৎ, খাদ্য গ্রহণের সংযম এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। মোটা হওয়ার চেষ্টা করলেও খাদ্যের মান এবং পরিমাণে সংযম রাখা উচিত।
- আরনল্ড শোয়ার্জেনেগারঃ বিশ্ব বিখ্যাত বডি বিল্ডার এবং অভিনেতা আরনল্ড শোয়ার্জেনেগার বলেছেন, "The worst thing I can be is the same as everybody else." অর্থাৎ , তিনি শারীরিক ফিটনেস এর গুরুত্ব দিয়েছেন, এবং সঠিকভাবে ওজন বাড়ানোর জন্য সঠিক খাদ্য ও ব্যায়াম এর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন ।
এমন অনেক মহৎ ব্যক্তি আছেন যারা স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার গুরুত্ব এবং সঠিক খাদ্য ও ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছেন। তাদের কথাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের জীবনযাত্রা আরো সুস্থ এবং সুশৃঙ্খল করতে পারি।
লেখক মন্তব্য
আপনার শরীর মোটা করার জন্য আপনি উপরের পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, যারা চিকন তারা চায় মোটা হতে আর যারা মোটা তারা চায় চিকন হতে। তাই সব সময় চেষ্টা করবেন স্বাস্থ্যবান হওয়ার জন্য। মোটাও নয় চিকনও নয়।
স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিগণকে সকলেই পছন্দ করে। যারা চিকন কিংবা যারা মোটা তাদেরকে দেখবেন ততটা পছন্দ করেনা লোকজন। তাই অতিরিক্ত চিকন কিংবা অতিরিক্ত মোটা হওয়ার চেষ্টা করবেন না। সব সময় চেষ্টা করবেন স্বাস্থ্যবান থাকার জন্য। এর ফলে আপনার কাজকর্মে ও খেলাধুলায় সবদিক থেকে দেখবেন সুবিধা আর সুবিধা।
আপনার মন্তব্যটি এখানে লিখুন
comment url