কীবোর্ড কি ? কীবোর্ড এর কয়টি অংশ ও এর কাজ
কীবোর্ড একটি ইনপুট ডিভাইস যা কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন এবং অন্যান্য ডিভাইসে তথ্য প্রবেশ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত আলফা-নিউমেরিক কী এবং কিছু নির্দিষ্ট ফাংশন কী নিয়ে গঠিত। কীবোর্ডের সাহায্যে আমরা বিভিন্ন ধরনের ডেটা লিখতে এবং বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালনা করতে পারি। কীবোর্ডের বিভিন্ন ধরনের লেআউট রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো QWERTY, AZERTY, Dvorak ইত্যাদি। এগুলো বিভিন্ন ভাষায় এবং প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহৃত হয়।
প্রথমদিকে কীবোর্ড এর আবির্ভাব ঘটে টাইপ রাইটারের বিকল্প হিসেবে। সময়ের সাথে সাথে এর কার্যকারিতা ও ডিজাইন অনেক উন্নত হয়েছে। আজকের কীবোর্ড গুলিতে প্রায় সকল ধরনের সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়ার ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত করার সুবিধা রয়েছে। যার ফলে আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজ যেমন, গেম খেলা, টাইপিং করা ইত্যাদি করতে পারি। আপনি যদি একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই একটি কীবোর্ড এর সাহায্যে আপনার দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
কীবোর্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন কী, একটি নির্দিষ্ট ক্রমে সাজানো থাকে। নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, কীবোর্ড এর টাইপিং স্টাইল এবং এর ব্যবহারকারীদের জন্য কতটা সুবিধা জনক এই হিসেবে। কীবোর্ডের সবচেয়ে সাধারণ বিন্যাস হলো QWERTY বিন্যাস, এই বিন্যাসটি ১৮৭৮ সালের সর্বপ্রথম ব্যবহৃত করা হয়েছিল।
কীবোর্ডের অংশ কয়টি
কীবোর্ডকে ভালোভাবে লক্ষ করলে দেখা যায়, এতে অনেকগুলো প্যাটার্ন রয়েছে। যেগুলো সুন্দর করে সাজানো থাকে। এদের প্রত্যেকটি মূলত কীবোর্ডের এক একটি অংশ। এই অংশ প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত। সেগুলো হলোঃ
- ফাংশন কী (Function Keys)
- সংখ্যা কী (Number Keys)
- অক্ষর কী (Alphabet Keys)
তবে এগুলো ছাড়াও কীবোর্ড এর আরও কয়েকটি অংশ রয়েছে। সেগুলো হলোঃ
- নিয়ন্ত্রণ কী (Control Keys)
- এন্টার কী (Enter Key)
- ব্যাকস্পেস কী (Backspace Key)
- স্পেসবার কী (Spacebar Key)
- অ্যারো কী (Arrow Keys)
কীবোর্ডের অংশগুলোর কাজ কি
কীবোর্ডের যে আটটি অংশ সম্পর্কে আপনারা জানলেন। এদের প্রত্যেকটি রয়েছে নির্দিষ্ট ধরনের কাজ।
এগুলো সম্পর্কে জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেননা আপনি একজন কীবোর্ড ব্যবহারকারী। কীবোর্ড ব্যবহার করতে হলে এগুলো সম্পর্কে জানতেই হয়। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হবে।
অক্ষর কী (Alphabet Keys)
অক্ষর কী হলো কীবোর্ড এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অক্ষর কী মূলত অক্ষর টাইপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি ইংরেজি বর্ণমালা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাষার বর্ণমালা পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। কীবোর্ডে সাধারণত ২৬ টি ইংরেজি বর্ণের জন্য নির্দিষ্ট কী থাকে। যা বিভিন্ন লেখার কাজ সম্পাদন করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। টাইপিং গতি ও সঠিকতা বাড়ানোর জন্য অক্ষর কী গুলি একটি নির্দিষ্ট বিন্যাসে সাজানো হয়। QWERTY, AZERTY, Dvorak - এগুলো সবচেয়ে প্রচলিত বিন্যাস।
সংখ্যা কী (Number Keys)
সংখ্যা কীগুলো কীবোর্ড এর উপরে সারিতে এবং ডান পাশে উপস্থিত থাকে। সংখ্যা কীগুলো ব্যবহার করে আপনি বিভিন্ন সংখ্যা টাইপ করতে পারেন। সংখ্যাগুলি সাধারণ সংখ্যাগুলি সাধারণত (০-৯) শূন্য থেকে নয় পর্যন্ত হয়ে থাকে। এগুলো ব্যবহার করে আপনি গণনা, সংখ্যা প্রবেশ এবং অন্যান্য গাণিতিক কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। সংখ্যা প্যাড একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বিশেষ করে হিসাব নিকাশের কাজ সহজ করে তোলে।
ফাংশন কী (Function Keys)
ফাংশন কী গুলো কীবোর্ড এর উপরের দিকে অবস্থিত। আপনার কীবোর্ড এর উপরে লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন F1 থেকে F12 পর্যন্ত একটি ক্রমিক তালিকা রয়েছে। সেগুলোই মূলত ফাংশন কী। এগুলো বিভিন্ন শটকার্ট কমান্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়াও নির্দিষ্ট ফাংশন সম্পন্ন করতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ F1 কীটি সাধারণত সহায়তার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং F5 কীটি ব্রাউজারে পেজ রিফ্রেশ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
নিয়ন্ত্রণ কী (Control Keys)
নিয়ন্ত্রণ কী গুলো বিভিন্ন কমান্ড কার্যকর করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন Ctrl+C কপি করার জন্য এবং Ctrl+V পেস্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়। নিয়ন্ত্রণ কীগুলির মধ্যে Ctrl, Alt, এবং Shift অন্তর্ভুক্ত।এই ধরনের শর্টকাট গুলি ব্যবহারকারীদের সময় বাঁচাতে সাহায্য করে। এগুলো আপনি অবশ্যই ব্যবহার করে থাকেন।
ইন্টার কী (Enter Key)
ইন্টার কী হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা কমান্ড সম্পন্ন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যখন আপনি একটি নির্দিষ্ট কমান্ড প্রদান করেন, তখন ইন্টার কী চাপ দিয়ে আপনি সেই কমেন্ট টি কার্যকর করতে পারেন। এটি কীবোর্ডের প্রধান অংশ এবং সংখ্যা প্যাডে উভয় জায়গায় বিদ্যমান রয়েছে। আপনি টাইপিং করার সময় পরের লাইনে চলে যাওয়ার জন্য ইন্টার কী ব্যবহার করে থাকেন।
ব্যাকস্পেস কী (Backspace Key)
ব্যাকস্পেস কী টাইপিং এর সময় ভুল মুছে ফেলার জন্য ব্যবহৃত হয়। আপনি যদি একটি অক্ষর ভুল করে টাইপ করে ফেলেন, তাহলে সে অক্ষরটি মুছে ফেলার জন্য আপনি ব্যাকস্পেস কী তে চাপ দিবেন, তাহলে অক্ষরটি মুছে যাবে। এটি টাইপিং এর সময় ব্যবহারকারীদের ভুল সংশোধন করার কমান্ড অনুসরণ করে।
স্পেসবার কী (Spacebar Key)
স্পেস বার কী শব্দটি শুনলেই বুঝা যায় স্পেস বা ফাঁকা জায়গা তৈরি করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। এটি কীবোর্ডের সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘ কী নিয়ে বিস্তৃত । টাইপিং এর সময় স্পেস বার কী ব্যবহার করে আপনি প্রতিটি শব্দের মধ্যে ফাঁকা স্থান তৈরি করতে পারবেন। এটি লেখা সুন্দর করতে ব্যবহৃত করা হয়।
অ্যারো কী (Arrow Keys)
অ্যারো কীগুলি কার্সরের অবস্থান পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত হয়। উপরে যেতে, নিচে যেতে, ডানে যেতে বা বামে যেতে কার্সর নড়ানোর জন্য এই কী গুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ডকুমেন্ট সম্পাদনা এবং নেভিগেশন এর সময় এগুলো অত্যন্ত কার্যকর।
কীবোর্ড এর অংশগুলো ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা
প্রতিটি জিনিস জানা অজানার সাথে, সেই জিনিসটি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা জানাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অনুচ্ছেদটিতে কীবোর্ডের এই অংশগুলো জানার সুবিধা এবং কীবোর্ড এর এই অংশগুলো না জানা থাকলে তার অসুবিধা গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
কীবোর্ডের অংশগুলো জেনে থাকার সুবিধা
কীবোর্ডের অংশগুলো জেনে থাকার বিভিন্ন সুবিধা লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুবিধা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
- দ্রুত টাইপিংঃ কীবোর্ড এর বিভিন্ন কী এর অবস্থান এবং কার্যকারিতা জানা থাকলে টাইপিং অনেক দ্রুত হয়।
- কমান্ড কার্যকর করাঃ নিয়ন্ত্রণ কী গুলো নিয়ন্ত্রণ কী গুলো এর সঠিক ব্যবহার জানা থাকলে আপনি কমান্ড দ্রুত কার্যকর করতে পারবেন। এবং শর্টকাটে তা ব্যবহার করতে পারবেন।
- দক্ষ সম্পাদনাঃ ব্যাকস্পেস কী এবং অ্যারো কী এর ব্যবহার জানলে ডকুমেন্ট বা টেক্সট সম্পাদন করা সহজ ভাবে এবং দক্ষতার সাথে করা যায়।
- সংখ্যা প্রবেশেই সহজতরঃ সংখ্যা প্যাড এবং সংখ্যা কী এর ব্যবহার জেনে থাকার মাধ্যমে সংখ্যাগুলি দ্রুত প্রবেশ করাতে পারবেন। তাছাড়া ও সহজ পদ্ধতিতে আপনি হিসাব নিকাশের কাজ সম্পাদন করতে পারবেন।
- শর্টকাট ব্যবহারে দক্ষতাঃ ফাংশন কী এর ব্যবহার শিখার মাধ্যমে আপনি শর্টকাট কমান্ড দ্রুত কার্যকর করতে পারবেন। তাছাড়াও অল্প সময় আপনি আপনার কাজটি সম্পাদন করতে পারবেন।
- গেমিং সুবিধাঃ গেমিং কীবোর্ড এর ব্যবহার করতে হলে আপনাকে কীবোর্ড এর অংশগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। বিশেষ কীবোর্ড হিসেবে গেমিং কীবোর্ড এর কী এবং কার্যকারিতা জানলে গেম খেলার সময়ের উন্নত পারফরম্যান্স পাওয়া যায়।
কীবোর্ডের অংশগুলোর কাজ না জানার অসুবিধা
কী বোর্ডের অংশগুলোর কাজ সম্পর্কে আপনার ধারণা না থাকলে, আপনি প্রথমত এর সুবিধা গুলো ভোগ করতে পারবেন না। তাছাড়া আপনার আরো অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। সেগুলো হলোঃ
- শুরুতে ধীরগতিঃ যারা নতুন ব্যবহারকারী, তাদের জন্য শুরুতে কীবোর্ডের ব্যবহার করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। কীবোর্ড এর সব কী এর কার্যকারিতা শেখা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
- ভুল কমান্ডঃ নিয়ন্ত্রণ কী বা ফাংশন কী এর ব্যবহারে কমান্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভুল হতে পারে। যা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাছাড়া কীবোর্ডের যাবতীয় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- শারীরিক সমস্যাঃ কীবোর্ডের অংশগুলোর কাজ না জানার মাধ্যমে আপনি সঠিক ব্যবহার করতে পারবেন না। দীর্ঘক্ষণ কীবোর্ড ব্যবহার করার ফলে হাতের আঙ্গুলে চাপ পড়তে পারে। যা RSI (Repetitive Strain Injury) এর মত সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাঃ কীবোর্ডের নির্দিষ্ট অংশে অত্যাধিক নির্ভরশীলতা তৈরি হলে অন্য পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে।
- শিখতে সময় লাগাঃ বিভিন্ন কী এবং শর্টকাট কমান্ডগুলো শিখতে সময় লাগে। যা নতুনদের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই আগে থেকেই এই অংশগুলো শিখে রাখা ভালো।
এই সুবিধা ও অসুবিধা গুলো কীবোর্ড এর অংশগুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকার উপর নির্ভরশীল।আপনার যদি অংশগুলোর কাজ সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে, তাহলে আপনি সকল সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আর যদি না জানা থাকে, তাহলে অসুবিধা গুলো করতে হবে।
লেখক মন্তব্য
যারা কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, তাদের জন্য তো অবশ্যই কীবোর্ড এর সম্পূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এছাড়া আপনি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহারের মজা উপভোগ করতে পারবেন না। আর যারা মোবাইল ব্যবহার করছেন ভবিষ্যতে ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন, তারা অবশ্যই কীবোর্ডের অংশগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখবেন।
আপনার মন্তব্যটি এখানে লিখুন
comment url