ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন ফল খাওয়া উচিত?

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ফল বাছাই করে খাওয়া, তাদের জন্য খুবই প্রয়োজন বিষয়। কেননা অনেক ফল আছে যেগুলো ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য উপকারী, আবার অনেক ফল আছে যেগুলো ক্ষতিকর।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন ফল খাওয়া উচিত?

ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়। এই জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফল হল প্রাকৃতিক পুষ্টির একটি উৎস, তবে ফলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা, ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই খারাপ বিষয় হতে পারে।

তাই ফল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আজকের ব্লগে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ এবং উপকারী কিছু ফল এবং তাদের বিশ্লেষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফল খাওয়ার গুরুত্ব

ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে। হবে এর জন্য সঠিক ফল বাছাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে যে সকল ফলের মধ্যে ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে সেই ফলগুলো বেছে নেওয়া উচিত। তাছাড়াও ফল আমাদের শরীরের হজম শক্তি বাড়াতে ভূমিকা পালন করে। শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে ফল।

সঠিক ফল বাছাই করা

কিছু ফলে প্রাকৃতিক শর্করার পরিমাণ বেশি থাকতে পারে, সেগুলো ফল ডায়াবেটিস রোগীদের এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ ফলের প্রাকৃতিক শর্করা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ি তোলে। আমরা প্রাকৃতিক শর্করাযুক্ত ফল বাছাই এর ক্ষেত্রে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) বিবেচনা করে বাছাই করতে পারি। GI হলো একটি মাপকাঠি বা মাপ পদ্ধতি যা বলে দেয়, কোন খাবার কত দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। কম GI যুক্ত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত করা হয়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী ফল

বাংলাদেশের বিভিন্ন রকমের ফল রয়েছে । প্রত্যেকটি ফলেরই নির্দিষ্ট কোনো না কোনো উপকারিতা এবং অপকারিতা রয়েছে । আমরা এই ব্লগে যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী ফল নিয়ে আলোচনা করব, তাই সেই সকল ফল এবং তাদের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

আপেল

  • GI ও পুষ্টিগুণঃ আপেল একটি কম GI সম্পন্ন ফল। যার GI সাধারণত ৩৬ থেকে ৪০ এর মধ্যে থাকে। আপেল শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। তাছাড়াও আপেলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।
  • আপেলের বিশ্লেষণঃ আপেলের মধ্যে ফাইবারের উপস্থিতি থাকায়, আপেল হজম পদ্ধতিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়াও ফাইবারের কারণে আপেল খেলে পেট ভরে যায়, যা অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে। আপেলের পলিফেনলস ইনসুলিন, সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং শর্করা মেটাবলিজমে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আর তাই আপেল ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বেল

  • GI ও পুষ্টিগুণঃ বেল ফলের GI সাধারণত ৩০ এর নিচে থাকে, তাই বেলকে ডাইবেটিস রোগীদের জন্য একটি আদর্শ ফল হিসেবে বিবেচিত করা যায়। বেল ফলের মধ্যে প্রচুর ফাইবার এবং ভিটামিন সি রয়েছে। এগুলো হজম শক্তি বাড়াতে এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা পালন করে।
  • বেল ফলের বিশ্লেষণঃ বেল ফলটি প্রাকৃতিক ঔষধি গুনসম্পন্ন একটি ফল। বেল ফল ডায়াবেটিসের বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বেলের মধ্যে থাকা ট্যানিন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, গ্যাসট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা এবং ইনফ্লামেশন কমাতে সাহায্য করে। তাই বেল ফল ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফল।

জাম

  • GI ও পুষ্টিগুণঃ জাম একটি কম GI সম্পন্ন ফল। জামের GI সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে থাকে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
  • জামের বিশ্লেষণঃ জাম ফলের মধ্যে ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম রয়েছে। জাম শরীরের মেটাবলিজমে সাহায্য করে । এছাড়াও জাম ফলের মধ্যে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, দেহের মুক্ত রেডিকেল দূর করতে সাহায্য করে। যার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। তাই জাম ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি নিরাপদ ও পুষ্টিকর বিকল্প।

নাশপাতি

  • GI ও পুষ্টিগুণঃ নাশপাতি ফলের GI সাধারণত ৩৮ থেকে ৪২ এর মধ্যে থাকে। এই ফলটি ফাইবার , ভিটামিন সি এবং কপার সমৃদ্ধ ফল। নাশপাতি রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • নাশপাতি এর বিশ্লেষণঃ ফাইবার সমৃদ্ধ ফল হওয়ার কারণে, নাশপাতি খেলে পেট ভরা থাকে এবং ক্ষুধা কমে যায়। ফাইবারের উচ্চমাত্রা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা পালন করে। তাছাড়াও হৃদ যন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী একটি ফল হলো নাশপাতি। নাশপাতির মধ্যে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের জন্য উপকার নিয়ে আসে। তাই নাশপাতি ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য।

স্ট্রবেরি

  • GI ও পুষ্টিগুণঃ স্ট্রবেরি ফলের GI সাধারণত ৪১ থেকে ৪৫ এর মধ্যে বিদ্যমান থাকে। এটি এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং ম্যাঙ্গানিজে ভরপুর।
  • স্ট্রবেরি ফলের বিশ্লেষণঃ স্ট্রবেরি খেলে তা শরীরের ইনফ্লামেশন কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়াও হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফল স্ট্রবেরি। স্ট্রবেরি ইনসুলিন সংবেদন ছিল তা বাড়াতে সাহায্য করে। স্ট্রবেরি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন ফল খাওয়া উচিত?

কমলা

  • GI ও পুষ্টিগুণঃ কমলা একটি উচ্চ ফাইবার এবং ভিটামিন সি সম্পন্ন ফল। কমলা ফলের GI সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ এর মধ্যে বিদ্যমান। এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • কমলা ফলের বিশ্লেষণঃ কমলা খেলে তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়াতে সাহায্য করে। যার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ পদ্ধতি অবলম্বন করে। কমলার ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায় এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে।

আঙ্গুর

  • GI ও পুষ্টিগুণঃ আঙ্গুরের GI সাধারণত ৪৫ থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকে, যা কিছুটা বেশি হলেও, পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হলে তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর নয়। আঙ্গুর ফলের মধ্যে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যালস, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন কে।
  • আঙ্গুর ফলের বিশ্লেষণঃ আঙ্গুর ফলে বিদ্যমান থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান , শরীরের মুক্ত রেডিকেলস দূর করতে সাহায্য করে এবং হৃদ যন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে। আঙ্গুলের মধ্যে থাকা রেসভেরাট্রল ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে ।

বুলবেরি ফল

  • GI ও পুষ্টিগুণঃ বুলবেরি একটি উচ্চ এন্টিঅক্সিডেন্ট সম্পন্ন ফল। বুলবুলি ফলের GI সাধারণত ৫০ এর নিচে থাকে। বুলবেরি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধিতেও এই ফলটি কাজ করে।
  • বুলবেরি ফলের বিশ্লেষণঃ এই ফল হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই ফলে বিদ্যমান থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ইনফ্লামেশন কমায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।

ডায়াবেটিস রোগীদের ফল খাওয়ার নির্দেশনা

ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য ফল খাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে সঠিকভাবে ফল খাওয়া আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিজে কিছু সাধারণ নির্দেশনা দেয়া হলোঃ

  • পরিমিত পরিমাণে ফল খাওয়াঃ ডায়াবেটিস রোগীদের দিনে দুই থেকে তিনটি সার্ভিং ফল খাওয়া উচিত। তবে তা পরিমিত পরিমাণে হতে হবে। প্রতিটি ফলের GI মান অনুযায়ী তা বাছাই করা উচিত।
  • ফলের রস এড়িয়ে চলাঃ ফলের রসের প্রাকৃতিক শর্করা থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিসাধন করতে পারে। তাছাড়াও ফলের রসে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে, যা শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে। তাই পুরো ফল খাওয়া ভালো, রসের পরিবর্তে।
  • খাদ্য গ্রহণে সামঞ্জস্য বজায় রাখাঃ ফলের সাথে প্রোটিন বা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপেলের সাথে বাদাম খাওয়া ভালো হবে।
  • ফল খাওয়ার সময় নির্বাচনঃ দুপুরের খাবারের পরে বা বিকেলের নাস্তার সময়, ফল খাওয়া সবচেয়ে ভালো। তবে তা পরিমিত পরিমাণ হতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শঃ যেহেতু আমি কোন ডাক্তার বা চিকিৎসক নই, তাই আপনাকে সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারছি না। আপনি আপনার আশেপাশের ডাক্তার বা চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিয়ে, যেকোনো পদক্ষেপ নিবেন।

FAQ

ডায়াবেটিস রোগীদের ফল খাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিনিয়ত কিছু প্রশ্ন সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলোর র মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হবেঃ

  • প্রঃ ডায়াবেটিস রোগীদের কোন ফল খাওয়া উচিত?
  • উঃ আপেল, বেল, জাম, নাশপাতি, স্ট্রবেরি, কমলা, আঙ্গুর, বুলবেরি ।
  • প্রঃ ডায়াবেটিস রোগীরা কি পরিমানে ফল খেতে পারে?
  • উঃ প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি সার্ভিং ফল।
  • প্রঃ ডায়াবেটিস রোগীদের ফলের রস খাওয়া কি নিরাপদ?
  • উঃ না, আপনারা যারা ডায়াবেটিস রোগী তারা ফলের রস এড়িয়ে চলুন। আপনি চাইলে পুরো ফল খেতে পারেন।
  • প্রঃ ডায়াবেটিস রোগীদের ফল খাওয়ার সেরা সময় কখন?
  • উঃ ডায়াবেটিস রোগীদের দুপুরের খাবারের পরে অথবা বিকেলের নাস্তার সময় ফল খাওয়া উচিত।
  • প্রঃ ডায়াবেটিস রোগীদের কলা খাওয়া নিরাপদ কিনা?
  • উঃ পরিমিত পরিমানে খাওয়া উচিত।
  • প্রঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে ভালো ফল কোনটিঃ
  • উঃ আপেল, জাম এবং বেল।
  • প্রঃ ডায়াবেটিস রোগীদের কোন ফল গুলো খাওয়া উচিত নয়?
  • উঃ ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ GI যুক্ত ফল খাওয়া উচিত নয়। যেমন তরমুজ, আনারস, কাঁঠাল ইত্যাদি।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন ফল খাওয়া উচিত?

লেখক মন্তব্য

আশা করি এই ব্লগ পোস্ট করার মাধ্যমে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন। ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করার বিষয়ে আমাদেরকে সতর্ক হওয়া উচিত। দিন দিন এই রোগ বেড়েই চলেছে।

উপরে যদি কোন কিছু ভুল কিংবা পরিবর্তিত ফলাফল আপনি লক্ষ্য করতে পারেন, তাহলে কমেন্টে জানাবেন আমরা অবশ্যই তা পরিবর্তন করব। এতে আমাদেরও উপকার হবে এবং পরবর্তীতে যারা এই আর্টিকেলটি করবে তাদেরও সুবিধা হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার মন্তব্যটি এখানে লিখুন

comment url